বোঝানো যাবে না যে কতটা ভয়ঙ্কর ছিল সেদিন
রক্তাক্ত ২১ আগস্ট আজ। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেঁপে উঠেছিল নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলায়। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মানুষের আর্তনাদ আর ছোটাছুটিতে সেদিন তৈরি হয়েছিল বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। আহত হন ৫ শতাধিক নেতাকর্মী।
সেদিনের কিছু স্মৃতি ঢাকা পোস্টের কাছে তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে সারা বাংলাদেশে যে ক্ষমতার রাজত্ব করেছিল এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বিচারে হত্যা, জেল, জুলুম, বাড়িঘর দখলসহ বিভিন্ন অত্যাচার-জুলুমের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট শান্তি সমাবেশের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ট্রাকের উপর ওস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তার সাথে ছিলেন আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
সাহাবুদ্দিন ফরাজী বলেন, সবাই বক্তব্য রাখার পরে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বক্তব্য রাখেন, বক্তব্য প্রায় শেষ, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলবেন, সেই মুহূর্তে একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। তখন আমরা ভেবেছিলাম বিএনপি আমাদের এই শান্তি সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য বোমা মেরেছে। ততক্ষণে চারপাশ থাকে চিৎকার আসতে থাকে। আরও কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। তারপর দেখি চারপাশে মানুষ পড়ে আছে, ছটফট করছে, কয়েক হাজার জুতা-স্যান্ডেল পড়ে আছে। তিনি আরও বলেন, আমি দেখলাম আইভি রহমান খুব মারাত্মকভাবে আহত। আমি তখন ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। এক সময় দেখি এলাকাটা জনশূন্য হয়ে গেছে। তখন পুলিশও আমাদের পেটাতে শুরু করে। আমি দৌড় দিলাম, ২০ থেকে ২৫ গজ যাওয়ার পরই পড়ে গেলাম। তারপর অনেক চেষ্টা করি দাঁড়ানোর, কিন্তু বাম পা দিয়ে কোনোভাবে দাঁড়াতে পারছিলাম না। কয়েকজন আমাকে ধরাধরি করে আমাকে নিয়ে যায়। এ সময়টা কত ভয়াবহ ছিল তা যে নিজে না দেখেছে, সে উপলব্ধি করতে পারবে না।
ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে এক সময় নিজের আর বেঁচে ফেরার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন ফরাজী। এক সময় ভাবতেও শুরু করেন পরিবারের কাছে লাশটা হয়তো কোনোভাবে পৌঁছাতে পারে। নিজের ছেলের মুখটা ভেসে ওঠে। এসবের মধ্যে তাকে ধরাধরি করে একটি টেম্পুতে তোলা হয়। নেওয়া হয় এলিফ্যান্ট রোডের একটি হাসপাতালে।
হাসপাতালের পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, হাসপাতালে কোনো ডাক্তার পাইনি, যে ডাক্তাররা ছিল তারাও চলে গেল। তখন এনামুল হক শামীম বললেন- ভাই, বাঁচতে চাইলে চলেন শিকদার মেডিকেলে যাই। তারপর আমরা সেখান থেকে সিকদার মেডিকেলে চলে যাই। শিকদার মেডিকেলে কয়েকদিন থাকার পরে আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দিল্লির অ্যাপলো হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসি।
আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বোমা হামলার পিছনে এটাই সত্য যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর তারেক জিয়ার আদেশে এই গ্রেনেড হামলা চালায়। যারা গ্রেনেড হামলা করেছে তাদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছে পুলিশ। সেদিন পুলিশ আহতদের সহযোগিতা না করে উল্টো লাঠিপেটা করে। বোমা নিক্ষেপকারীদের পালিয়ে যাওয়ার পথ করে দেয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী বলেন, অনেকের মতো সমাবেশে আমিও আহত হই। কী ভয়ঙ্কর ছিল সেদিন বলে বোঝানোর মতো না। চিকিৎসা নেই, পদে পদে হয়রানি। হাসপাতালে মেরে ফেলার চেষ্টা। কী না করেছিল ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাই যাদের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে, সেই রায় অবিলম্বে কার্যকর হোক। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক।
What's Your Reaction?