স্কুল কলেজ পড়ুয়া  শিক্ষার্থীদের বুলিং-হেনস্তা; টার্গেট নারীরা

Apr 23, 2025 - 14:19
 0
স্কুল কলেজ পড়ুয়া  শিক্ষার্থীদের বুলিং-হেনস্তা; টার্গেট নারীরা

বরগুনায় বেশ কিছুদিন যাবত স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের তরুণ তরুণীদের আতংকের নাম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

বরগুনার শিক্ষার্থী এবং তরুন-তরুনীদের আতঙ্কের নাম ‘বরগুনার ছাপড়ি,কট খাবি মামা,বরগুনার ভাইরাল,বরগুনার মধু গুলা  শুভ মৃধা আরও নামে বেনামে অনেক ফেইসবুক পেইজ ও গুরুপ’। এসকল  ফেইসবুক পেজ ও গুরুপের  বিরুদ্ধে মেয়েদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। 


পোস্টদাতা নিজের পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের নাম, ঠিকানা উন্মুক্ত করে পোস্ট করার কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া ঝুঁকিতে পড়ছে তাদের ভবিষ্যৎ এবং নিশ্চিত হচ্ছে না তাদের সুরক্ষা। এসব কর্মকাণ্ডকে সাইবার অপরাধ উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পুলিশের।

খোজ নিয়ে জানা যায়, এই সকল ফেইসবুক পেইজ ও গুরুপে  হাজার হাজার ফলোয়ার রয়েছে। পেইজগুলো  থেকে প্রতিদিন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়াই ছবিসহ নাম-পরিচয় দিয়ে প্রেম নিবেদনের এবং বিভিন্ন মান হানিকর  নোংরা কথা লিখে একাধিক পোস্ট করা হচ্ছে। যাদের নিয়ে পোস্ট করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই বরগুনা বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্র- ছাত্রী। বিশেষ করে মেয়েদের ছবি দিয়ে পরিচয় উন্মুক্ত করে পোস্ট করা হয় বিয়ে কিংবা প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে অথবা তাদের সন্মান হানিকর বিভিন্ন কথা লেখা হয় এই সকল পোস্টে। অথচ যার ছবিসহ পোস্ট করা হচ্ছে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানেন না।

সম্প্রতি বরগুনা কেন্দ্রিক পেইজগুলোর মাধ্যমে সামাজিকভাবে হয়রানির পরিমাণ মারাত্মক হারে বেড়েছে। এ থেকে বাড়ছে হতাশা, নারী ও ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা। এর মাধ্যমে অনেকে হচ্ছেন বুলিংয়ের শিকার। ফেসবুকের যোগাযোগমাধ্যমে প্রেম নিবেদনের এসব পোস্টের কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তারা।


জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) সাইবার বুলিংয়ের সংজ্ঞায় বলছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে উত্ত্যক্ত করাকে বলে সাইবার বুলিং। আর এই উত্ত্যক্ত করার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, খুদে বার্তা, গেমিং প্ল্যাটফর্ম বা মুঠোফোন।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে লিপি(ছদ্মনাম) কলেজ  শিক্ষার্থী জানান, শহরে পরিবারসহ যেসব মেয়েরা থাকে তাদের পরিবারগুলো অনেক সময় এসব সমস্যা বুঝতে পারে। কিন্তু গ্রামের মেয়েদের পরিবারগুলোকে এসব বোঝানো খুবই কঠিন। দিনশেষে মেয়েদেরই দোষ দেয় সমাজব্যবস্থা।


সোনিয়া (ছদ্মনাম) নামের আর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা মেয়েরা সবসময় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। নতুন সমস্যার নাম হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এসব পেজ। আশা করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


এক ভুক্তভোগী আরো বলেন, কিছুদিন আগে বরগুনা বৈশাখী মেলায় গিয়েছিলাম। সেখানে কেউ গোপনে ছবি তুলে এই পেজে পোস্ট করে। বিষয়টা জানাজানি হলে পারিবারিক ভাবে নানান সমস্যার সম্মুখীন হই। আজকাল রাস্তাঘাটে বের হতেও ভয় লাগে।


মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- একপ্রকার যৌন নিপীড়নের হাতিয়ার এই পেইজগুলো।একজন ছাত্রীর সম্পর্কে যখন নেতিবাচক তথ্য প্রকাশ হয়, সে যত স্ট্রং মানসিকতারই হোক না কেন; স্থির থাকতে পারবে না। ফলে ভুক্তভোগীর পক্ষে এ ধরনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়াটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।


জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুজ্জামান মাহফুজ বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে টিনেজার যারা রয়েছে তাদের সতর্ক থাকা উচিৎ বেশি। আর অভিভাবকদের বলতে চাই, আপনারা নিজের সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের দিকে যত্নবান হবেন। 


এ ব্যাপারে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম বলেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক এবং সাইবার ক্রাইমের অংশ। এ ব্যাপারে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিব। পাশাপাশি এসব পেজ বন্ধে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।



What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow