কুষ্টিয়ায় ২৮৮ মিল মালিকের ৯৩ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত

Aug 31, 2023 - 18:51
 0  70
কুষ্টিয়ায় ২৮৮ মিল মালিকের ৯৩ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত

বোরো ২০২০ মৌসুমের চাল  চুক্তি করে চুক্তি মোতাবেক চাল না দেওয়ায় ২৮৮ জন মিল মালিকের ৯৩ লাখ ১২ হাজার ৩শ ৯৬ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস।

জেলা খাদ্য অফিসের তথ্য মতে, বোরো ২০২০ মৌসুমের জেলায় মোট ৫৮৮ জন মিল  মালিক চুক্তি করে। এরমধ্যে চুক্তির মোতাবেক সমুদয় চাল সরবরাহ করে ২৯৬ জন মিল মালিক। আংশিক চালসরবরাহ করে ৩০ জন মিল মালিক। কোন চাল সরবরাহ করেন নাই এমন মিলের সংখ্যা ২৬২। আংশিক চাল পরিশোধকারী ৬ জন মালিকের চুক্তি কালীন জামানত অবমুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ৬ জন মিল মালিকে চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর  ও ২৪ অক্টোবর  তারিখে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রাপ্য ১৫ লক্ষ ৫২ হাজার ৫১৬ টাকা জমা দাখিল করার জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়। 

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়  ৫ জন মিল মালিক ব্যাংকের চালান এর মাধ্যমে ১৫ লক্ষ ৫২ হাজার ৫৭৩ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়। আংশিক চাল সরবরাহকারী অবশিষ্ট ২৪ জন মিল মালিকের জামানত টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে যা জেলা খাদ্য অফিসে রক্ষিত আছে। ২৪ জনের বাজেয়াপ্ত টাকা পরিমাণ  ২৮ লক্ষ ৮৯ হাজার ২৩০ টাকা। চুক্তি করে চাল দেয়নি এমন ২৬২ জন মিল মালিকের মধ্যে ২৫৯ জন মিল মালিকের ৪৮ লক্ষ ৭০ হাজার ৬৫০ টাকা জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বাকি তিনজন মিল মালিকের ৩৬ হাজার ২০০ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পে-অর্ডার না হওয়ায় বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হয়নি। 

এর আগে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য অফিসে আলমারি থেকে মিল মালিকদের নিরাপত্তা জামানত হিসেবে রাখা ২৩ লাখ টাকার পে-অর্ডার উধাও হয়ে যায়। সিডি বা নগদ জমা নামে পরিচিত সেই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলেও নেওয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে চাল সরবরাহ করতে না পারায় ওই অর্থ আটকে রাখা হয়েছিল। তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, অফিসের কয়েকজন কর্মচারীর সহযোগিতায় গোপনে এসব সিডি বাইরে এনে ব্যাংক থেকে ভাঙিয়ে অর্থ তুলে নিয়েছেন কয়েকজন মিল মালিক।

জেলা খাদ্য অফিসের কর্মরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে জানিয়েছে, ব্যাপারী এগ্রো রাইস মিলের মালিক তোফাজ্জেল হোসেন ও জাহানারা রাইস মিলের মালিক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর যোগসাজশে খাদ্য অফিসের কয়েকজন কর্মচারী এ কাজ করেছে ।

২০২০ সালে সিডি গায়েবের ঘটনা ঘটলেও টের পাওয়া গেছে  চলতি মাসে ( আগস্ট-২০২৩ ইং)।  বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছয়জন মিল মালিকের নামে চিঠি ইস্যু করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার পাশাপাশি অর্থ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি চার সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছিল । এ ঘটনায় খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৩ ও ২৪ আগস্ট সারাদেশের খাদ্য অফিসে চিঠি দিয়ে ২০২০ সালের সিডির বিষয়ে তথ্য চায়।

 খাদ্য বিভাগ ও মিল মালিকদের একাধিক সূত্র জানায়, ২০২০ সালে করোনা চালাকালে মিল মালিকরা সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করে। অন্য মিলারদের পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ হয় ব্যাপারী এগ্রো লি., ইফাদ অটো রাইস মিলের দুটি প্রতিষ্ঠান, আল্লাহর দান রাইস মিল, হালিম অটো, জাহানারা এগ্রো নামে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। তাদের ২৩ লাখ টাকার সিডি জমা রাখা হয় অফিসে। এরমধ্যে ইফাদ রাইস মিলের প্রায় ৯ লাখ টাকার চেক ছিল। তবে ইফাদ অটো রাইস মিল দেউলিয়া হয়ে গেছে। ২০২০ সালে ওই ছয় মিল মালিকের সঙ্গে আঁতাত করে অফিসের তৎকালীন এক দারানোয়সহ অফিসের কয়েকজন কর্মচারী সিডি চুরি করে অর্থ তুলে ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 খাদ্য বিভাগ জানায়, চুক্তি অনুযায়ী অনেক মিল মালিক চাল দিতে ব্যর্থ হন। এর পর খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে সেই মালিকদের জামানত আটকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মিল মালিকদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন জামানতের অর্থ খাদ্য অফিসে পড়ে থাকায় তারা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেনের সঙ্গে দেখা করে সিডির বিষয়ে সুরাহা করার দাবি তোলেন। বাবুল হোসেন তখন সিডি জমা দেওয়া মিল মালিকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।

 এদিকে তালিকা তৈরির সময় দেখা যায়, সেখানে ছয়জন মিল মালিকের ২৩ লাখ টাকার সিডি নেই। বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেনের নজরে আসলে তিনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) প্রবোধ কুমার পালের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয়। 

 খাদ্য কর্মকর্তারা জানান, চাল সংগ্রহের আগে প্রতিটি মিল মালিকের সঙ্গে সরকার চুক্তিবদ্ধ হয়। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী যে পরিমাণ টাকার চাল মিল মালিক সরবরাহ করবে, সে টাকা ২ শতাংশ হারে জামানত রাখতে হয়। মিল মালিকরা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিলে সেখান থেকে একটি পে-অর্ডার দেওয়া হয়। চাল পুরোপুরি গোডাউনে দেওয়ার পর মিল মালিকরা আবেদন করলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তা ফেরত দেন। এর পর সেই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নিতে পারেন মিল মালিকরা। কিন্তু এক্ষেত্রে ৬ জন মিল মালিক ও অফিসে কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় চুক্তি ভঙ্গ করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছিল।

 জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন বলেন, ৬ জন মিল মালিকরা তাদের সিডির অর্থ ব্যাংক থেকে নগদায়ন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তাই তাদের প্রমাণাদি পেশ করতে বলা হয়েছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় চলতি বছরের গত ২৮ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত  ৫ জন মিল মালিক ব্যাংকের চালান এর মাধ্যমে ১৫ লক্ষ ৫২ হাজার ৫৭৩ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ



What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow