ফেনীতে জামায়াত নেতা হত্যা মামলায় দুবাই প্রবাসীর নাম
ঘটনার সময় ছিলেন বিদেশে তবুও দেশে মাথায় আঘাত করে জামায়াত নেতাকে হত্যা করেছেন দুবাই প্রবাসী! ফেনীর সোনাগাজীতে জামায়াত নেতা হত্যা মামলার এজাহারে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে আকবর হোসেন তারেক নামের ওই প্রবাসী দেশে ফিরে তাকে হত্যা মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদ করায় মোবাইল ফোনে পুলিশ সুপার পরিচয়ে হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রবাসী বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় গত ২৫ আগস্ট সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
জানা গেছে, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি গ্রামে দুপক্ষের সংঘর্ষে গত ৫ মে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি নিহত ও ১২ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ২১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই আবু তৈয়ব। গত ৬ মে বাদী সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় ১৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে আকবর হোসেন তারেক নামে এক দুবাই প্রবাসীকে।
নিহত মিজানুর রহমান ছাড়াইতকান্দি গ্রামের কালা সোবহান বাড়ির জাকির উল্লার ছেলে। তিনি উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদ সদস্য। মিজানুর রহমান স্থানীয় মনগাজী বাজারে হোমিও দোকান চালাতেন। অপরদিকে প্রবাসে থেকেও আসামি হওয়া আকবর হোসেন তারেক একই গ্রামের হোসেন আহম্মদের ছেলে।
মামলার বাদী আবু তৈয়ব তার অভিযোগে উল্লেখ করেন ভূমি বিরোধের জেরে গাছের আমপাড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ সবুজের নেতৃত্বে আসামিরা তাদের ওপর হামলা করেন। পরে খবর পেয়ে তার ভাই মিজানুর রহমান বাড়িতে আসার পথে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে সংঘবদ্ধ হয়ে তার ওপর হামলা করেন। হামলায় তার ভাই রাস্তায় পড়ে গেলে আসামিরা লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হয় এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পর পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে অপর আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমানে তিনজন বাদে সবাই জামিনে রয়েছেন। অপরদিকে হামলা চালিয়ে জখম, বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে হত্যা মামলার বাদী আবু তৈয়বসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন কমলা বেগম। তিনি ছাড়াইতকান্দি গ্রামের কালা সোবহান বাড়ির মাইন উদ্দিন মামুনের স্ত্রী।
প্রবাসী তারেক বলেন, আমি হত্যাকাণ্ডের ৬ মাস আগেই দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতের দুবাই চলে যাই। সস্প্রতি দেশে ফিরে জানতে পারি আমাকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে পাসপোর্ট দেখিয়ে হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য জামিন নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, অন্য আসামিদের সঙ্গে আমি ভিকটিমকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেছি। হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আমাকে মিথ্যা অভিযোগে আসামি করা হয়েছে। দেশে ফেরার পর প্রতিবাদ করায় পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে আবু তৈয়ব তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। প্রাণনাশের আশঙ্কায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।
প্রবাসী তারেক কালবেলাকে তার পাসপোর্ট, বিমানের আসা যাওয়ার টিকেট ও কর্মক্ষেত্রের প্রত্যায়নপত্রের ফটোকপি প্রদান করেন। এসব অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, হত্যা মামলার আসামি তারেক গত বছরের ৯ ডিসেম্বর দেশ থেকে বিমানে দুবাই গমন করেন এবং চলিত বছরের ১৭ জুন দেশে ফেরেন।
প্রবাসীকে আসামি করার বিষয়ে মোবাইলে বাদীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথমে বলেন, তাকে আমরা আসামি করিনি, কে আসামি করেছে সেটা আমরা জানি না। পরক্ষণে আবার বলেন, তাকে হুকুমের আসামি করার কথা বলা হয়েছে। প্রবাসে বসে কীভাবে মাথায় আঘাত করে আপনার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি প্রদানের বিষয়ে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
মামলার তদন্তাকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাদী নিজ হাতের লেখা অভিযোগ দাখিলের পর সেটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আসামি তারেক ঘটনার সময়ে যে প্রবাসে ছিলেন তার প্রমাণাদি পুলিশকে দিয়েছে। আমরা তথ্যগুলো যাচাই করে সত্যতা পেয়েছি। অভিযোগপত্র দাখিলের সময় বিষয়টি আমলে নিয়ে বিবেচনা করা হবে।
সোনাগাজী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তালিম হোসাইন বলেন, আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেলে নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
What's Your Reaction?