বরগুনা ১ আসন; আওয়ামী লীগের চর্তুমূখী লড়াই, সংঘাত আতঙ্কে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
গত ৯ ডিসেম্বর তালতলী উপজেলা খাদ্য গুদাম সংলগ্ন কলবাড়িতে তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমতলী পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমান বলেন- ১৮ তারিখের পর খেলা শুরু হবে। চিরুনি অভিযান চালাবো, যে চিরুনি অভিযানের মধ্য দিয়ে ওরা কোনো এজেন্ট খুঁজে পাবে না, ভোট তো, দূরের কথা।
একই সভায় তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারেক মাঝির বক্তব্যে ‘আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঠ্যাঙ ভেঙে দেওয়া হবে’- বলে মন্তব্য করেন।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ নয় আওয়ামী লীগ নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। সোমবার তাদের শোকজ করে চিঠি ইস্যু করেন বরগুনা-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আহমদ সাঈদ।
নির্বাচনের শুরুতেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষের নেতা কর্মীদের হুমকি দেয়া বক্তব্যে সংঘাত আতঙ্কে ভুগছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন- অবশ্যই সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমতলী পৌরসভার মেয়র যেই বক্তব্য দিয়েছে সেটা আমাদেরকে সংঘাত নিয়ে ভাবনায় ফেলেছে। আমরা রির্টানিং অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আমরা আশা রাখি নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংঘাত মূলক আচরণের যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ খলিলুর রহমানও সংঘাতের কথা উল্লেখ করে বলেন- নির্বাচনী দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা ইতিমধ্যেই দলীয় প্রার্থীসহ ৯ জনকে শোকাজ করেছে। আমরা তাতে আশাবাদী। তিনি আরও বলেন আমি আহবান করব নির্বাচনের আগে কোন পক্ষই যাতে এমন আচরণ না করে যাতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
অন্য আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন- প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা পেয়েই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বক্তব্য সংঘাতের ইঙ্গিত বহন করে। এমন আচরণে জনগণ চিন্তিত। আমরা আশা করি প্রশাসন সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করবে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে নানা ভাবনা চিন্তা থাকলেও তা কাটিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভোটার উপস্থিত করতে ভিন্ন কৌলশ নিয়েছে। প্রতিবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনিত প্রার্থীর বিপক্ষে কেউ নির্বাচন করলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ থাকলেও এবারে দলের সভানেত্রী নির্বাচনে দলীয় কেউ অংশ গ্রহণ করতে পারবে বলে উন্মুক্ত করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন নেতা অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র শিথিল করে নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্ভুদ্ব করেন।
দলীয় সভানেত্রীর এমন ঘোষনায় ৩০০ আসনের প্রতিটি আসনে একাধিক স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ নেতা) প্রার্থী হয়েছেন। রাজনীতি বিশ্লেষকগণ বলছেন অনেক আসনে যারা ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেয়েছে তাদের বিপরীতে স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা) প্রার্থীরা জনসমর্থনে এগিয়ে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় লাভ করবেন অধিকাংশ আসনে।
বরগুনা ১ আসনও তেমনই একটা ধরা হচ্ছে। দলীয় মনোনিত প্রার্থী বাদেও আওয়ামী লীগের আরও হেবিওয়েট তিন নেতা নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন। তারা হলেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ খলিলুর রহমান এবং আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান।
আসনটির সাধারণ ভোটাররা বলছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ৫ বার আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবুও এখানকার তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করতে পারেননি। গত ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমপি শম্ভু বলেন "বরগুনা পটুয়াখালী পিরোজপুরের মত গুরুত্বপূর্ণ জেলা না" এমন মন্তব্য করায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে রীতিমত স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দেয়। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও এর প্রভাব দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন- দীর্ঘ ৫ বার দলীয় প্রতিক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও আমাদের জেলা সম্পর্কে এমন মতামতে আমরা আশাহত। তিনি আবারও নির্বাচিত হলে আমাদের এই আসনের মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা কতটুকু ভাববেন সেটি নিয়ে মনে প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। তারা আরও জানান, দলীয় সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারের নির্বাচন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে তারা খুশি। এতে তারা জনগণের পক্ষে কাজ করবে এমন নেতৃত্ব বেছে নিতে পারবেন বলেও আশা ব্যক্ত করেন।
দক্ষিনাঞ্চলের শেষ জেলা ধরা হয় বরগুনাকে। জেলার তিনটি উপজেলা বঙ্গোপসাগর তীরে। জেলাটি কৃষি ও মৎসখাতে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। ধরা হয় পর্যটন শিল্পে এই জেলা ভূমিকা রাখবে।
What's Your Reaction?