বরগুনা-১: স্বতন্ত্রের ত্রিমুখী চাপে নৌকার শম্ভু
বরগুনা-১ (সদর, আমতলী, তালতলী) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত পাঁচ বারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবার দলীয় তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাপে পড়েছেন। এবারও দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামলেও দলের তিন হেভিওয়েট নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু (ঈগল), আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক খলিলুর রহমান (ট্রাক) ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকান (কাঁচি) দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। শম্ভুসহ একই দলের চার জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে সামিল হয়েছেন।
প্রচারণা শুরুর পর বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। গত ১৫ বছরে শম্ভুর সময়ে এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি বলে উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে। এবার জনগণ পরিবর্তন চায়। আর এ পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণের দাবিতেই তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বলে এসব প্রার্থীরা বলছেন।
ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে পাঁচ বারের এমপি শম্ভু বরগুনায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বরগুনা জেলা পিছিয়ে রয়েছে এমন দাবি তার।
এছাড়াও পাশের জেলা পটুয়াখালীতে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ নদ-নদীতে একটি সেতুও নির্মাণ বাকি নেই, এছাড়া পায়রা বন্দর, তাপবিদ্যুতকেন্দ্র, সেনানিবাস এসবই পটুয়াখালীতে। তিনি আরও বলেন, এমপি শম্ভু উন্নয়নের ব্যাপারে নির্লিপ্ত ছিলেন। যে কারণে উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছে বরগুনা জেলা। এসব কারণেই বরগুনার মানুষ পরিবর্তন চায়।
কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান বলেন, পাঁচ বারের এমপি শম্ভুর জুলুম অত্যাচারে অতিষ্ঠ দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে হাইব্রিডদের দলে ভেড়ানো, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করা ও ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বর্তমান এমপি শম্ভুর বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান (ট্রাক) বলেন, তিনি এলাকার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়ে জনগণের রোষানলে পড়েছেন। মাঠের অবস্থা বুঝতে পেরে এখন আমাদের কর্মী সমর্থকদের প্রকাশ্যে বিভিন্ন পথসভায় অব্যাহত হুমকি দিয়ে আসছেন। এরকম হুমকি অব্যাহত থাকলে সাধারণ ভোটাররা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন। এতে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নজরুল স্মৃতি সংসদের নির্বাহী পরিচালক সাহাবুদ্দিন পান্না মনে করেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হুমকি অব্যাহত থাকলে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন শোকজ ও অর্থদণ্ড করলেও তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়নি। এতে সাধারণ ভোটাররা আরও কিছুটা হলেও ভীত হয়ে পড়েছেন।
বরগুনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু হুমকি প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তারা নৌকা, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাদের মনে রাখতে হবে, তাদেরকে আবারো দলের কাছে আসতে হবে। তখন এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে।
সূত্রঃ দ্যা ডেইলি ষ্টার
What's Your Reaction?