মাদ্রাসার অধ্যক্ষে বিরুদ্ধে পিবিজিএসআই স্কিমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগর, আবার সেই শিক্ষকই করছে দূর্ণীতি। তা যদি হয় মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, তবে প্রশ্ন উঠে সামাজিকভাবে। বরগুনা জেলার সদর উপজেলার চরকগাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পারফরমেন্স বেজড গ্রান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস (পিবিজিএসআই) স্কিম এর ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলে ভাউচার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান ও সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন করলেও নানা তালবাহানার পরে তথ্য প্রদান করেন আংশিক। সার্বিক বিষয় জেনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জেলা প্রশাসক মোহাঃ রফিকুল ইসলামের।
খোজ নিয়ে জানাযায়, চরকগাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পারফরমেন্স বেজড গ্রান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস (পিবিজিএসআই) স্কিম এর ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। বরাদ্দের অর্থ শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং প্রতিবন্ধী/বিশেষ চাহিদাসম্পান্ন শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটি উন্নয়ন (৫টি) খাতে ব্যয়ের নির্দেশনা থাকলেও বঞ্চিত হয়েছে সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। এমনকি বরাদ্দের বিষয় জানেনও না এলাকাবাসী। সাংবাদিকদের তথ্য চাওয়ার প্রেক্ষিতে ২৩ জানুয়ারী সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে স্বাক্ষর নিয়ে ১০০০ টাকা করে প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান। এমন কর্মকান্ডে তোপের মুখে পরেন তিনি। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তরিঘরি করে সটকে পরেন অধ্যক্ষ মিজান।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, গত ২৫ জানুয়ারী ১৫ জন সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা একত্রিত হয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ছায়ালিপিতে দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাদে বাকি ১৪ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা অভিযোগে স্বাক্ষর করে অভিযোগ দেয়। অভিযোগের অনুলিপিতে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরের নামও উল্লেখ করেন।
২০২৩ সনের ২৬ জুন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাক্ষরিত ২৬নং ভাউচারে বিতরণ বিবরণী জমা প্রদান করে সংশ্লিষ্ট্র দপ্তরে। বিতরণ বিবরণীতে শিক্ষার্থীদের টাকা পরিশোধের স্বাক্ষর থাকলেও শিক্ষার্থীরা অথবা তাদের অভিভাবকরা পায়নি টাকা।
এদিকে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তথ্য অধিকার আইনে ২০২৩ সনের ৫ ডিসেম্বর বরগুনা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করলেও বিভিন্ন তালবাহানার পর জেলা শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপে ২৪ জানুয়ারী আংশিক তথ্য প্রদান করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়াদ হাসান।
অভিযোগের বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস প্রদান করে তিনি বলেন- এ বিষয় ঐ প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন নি। তাই কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। তবুও আমি খোজ নিয়ে দেখে যদি সত্যতা পাই তবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বরগুনা সদর উপজেলায় পিবিজিএসআই স্কিম এর আওতায় ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বরাদ্দের অর্থ সঠিকভাবে বন্টন হয়নি বলে দাবী স্থানীয় সচেতন মহলের।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুমন সিকদার বলেন- সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রচুর পরিমানে বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এরই অংশ হিসাবে পিবিজিএসআই স্কিম এর আওতায় ৫ লাখ টাকা করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে খাত অনুযায়ী সঠিকভাবে ব্যায় করা হয় না। আমাদের দাবী শুধু বরাদ্দ দেয়াই নয়, বরাদ্দ দেয়া পরে সঠিক তদারকী করে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়।
অপর দিকে বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহবায়ক মোঃ হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন- মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যে ৫ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। আমরা ইতিমধ্যে শুনেছি বরাদ্দের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকে আমরা অনুরোধ জানাবো যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারাই যেন পায়।
তবে সার্বিক বিষয় জেনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন- এ বিষয়ে যদি অভিযোগ আসে আমরা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যে গাইড লাইন আছে সে অনুযায়ী বিতরণ করা না হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
What's Your Reaction?