বাংলাদেশিরা কিভাবে দুবাইয়ে কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনছেন
দুবাই শহরে ৫৩২ জন বাংলাদেশির বিলাসবহুল বাড়ি-ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির প্রতিবেদনে প্রকাশ, এসব সম্পদের মোট মূল্য ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশিরা বিনিয়োগের জন্য আলবেনিয়া ও সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব ব্যবহার করছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরের আবাসনবাজারে এখন বিভিন্ন দেশের মানুষ বিনিয়োগ করছেন। সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে সন্দেহভাজন অপরাধীরাও সেখানে বাড়ি কিনছেন। দুবাইয়ের আবাসনবাজারে বাংলাদেশিরাও রয়েছেন।
ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দুবাই শহরে ২০২২ সালে প্রস্তুত বা অপ্রস্তুত আবাসন সম্পদ কিনেছেন এমন বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ৩৯৪ জন, যাঁরা মোট ২২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের সম্পদ কিনেছিলেন। বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে ওই প্রতিবেদনে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি ধারণা করেছে, ২০২২ সালে এই সংখ্যা হতে পারে ৫৩২ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে দুবাই শহরে প্রস্তুত ও অপ্রস্তুত সম্পদ কিনেছেন এমন বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ৪০৫ জন এবং তাঁদের কেনা সম্পদের মূল্য ছিল ২১ কোটি ১২ লাখ ডলার; সেই বছর বাংলাদেশিরা মোট ৬৫৭টি সম্পদ কিনেছিলেন।
ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি বিভিন্ন শ্রেণিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে এবং ফাঁস হওয়া ঘটনার সঙ্গে নিজেদের আনুমানিক হিসাবও দিয়েছে, যেখানে ফাঁস না হওয়া ঘটনাও আমলে নেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে যে ৫৩২ জন বাংলাদেশি আবাসন কিনেছেন, তাঁদের কেনা সম্পদের মূল্য ছিল ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। ২০২০ সালে সে সংখ্যাটা ছিল ৫৬২ জন; অর্থের মূল্য ছিল ৩৭ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ, ২০২২ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পদ কেনার হার কমলেও তার অর্থের মূল্য বেড়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগপ্রত্যাশী নীতির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুবাই শহরে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা থাকলেই বাড়ি কেনা যায়, এ কারণে দুবাই এখন বিদেশিদের শহর হয়ে গেছে। তিন মিলিয়নের বেশি মানুষের শহরে আমিরাতিরা এখন মাত্র ৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দুবাই শহরে বিদেশিদের মালিকানাধীন আবাসনের মূল্য ছিল ১২১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালে ছিল ৯৮ বিলিয়ন ডলার। মূল্যের হিসাবে, দুবাই শহরের আবাসন খাতের ৪৩ শতাংশই এখন বিদেশিদের দখলে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রুশ ধনীদের বিনিয়োগ বেড়েছে, কিন্তু ভারতীয়রা এখনও সম্পদের মূল্যের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। ২০২২ সালে ভারতীয়দের সম্পদের মূল্য ছিল ২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা, এবং তৃতীয় স্থানে সৌদি আরব।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির নাগরিকরাও সম্পদ কিনেছেন, যেমন ২০২২ সালে ইয়েমেন এবং ২০২০ সালে সিরিয়া। এছাড়া ফিলিস্তিন, সুদান ও আফগানিস্তানের নাগরিকরাও তালিকায় আছেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুবাই, শারজাহ, আবুধাবি ও আজমান শহরে বাংলাদেশিরা ভিলা, ফ্ল্যাট, ছোট হোটেল, তারকা হোটেলসহ নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন। এ জন্য তাঁরা বাংলাদেশের পরিবর্তে আলবেনিয়া, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব ব্যবহার করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় পাম জুমেইরা, জুমেইরা, সিলিকন ওয়েসিস, এমিরেটস হিল, দুবাই মেরিনা ও বিজনেস বে’র মতো অভিজাত এলাকায়ও বাংলাদেশিরা সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
What's Your Reaction?