পুলিশি পাহারায় সাঈদীর কবর, জিয়ারতে বাঁধার অভিযোগ
সদ্যপ্রয়াত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর চার দিনেই স্বাভাবিক হয়নি পিরোজপুরের চিত্র। গত ১৫ আগস্ট তার দাফন সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পিরোজপুর থানা পুলিশ। কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে জামায়াত নেতা সাঈদীর কবর। অভিযোগ রয়েছে কবর জিয়ারতে বাঁধা দিচ্ছে নিরাপত্তায় থাকা পুলিশদের বিরুদ্ধে।
সদ্যপ্রয়াত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর চার দিনেই স্বাভাবিক হয়নি পিরোজপুরের চিত্র। গত ১৫ আগস্ট তার দাফন সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পিরোজপুর থানা পুলিশ। কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে জামায়াত নেতা সাঈদীর কবর। অভিযোগ রয়েছে কবর জিয়ারতে বাঁধা দিচ্ছে নিরাপত্তায় থাকা পুলিশদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ফিরে আসা অনেক সাধারণ মানুষ এই অভিযোগ করেন।
এই বিষয়ে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. নূরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা বলছে কোন রকম বিশৃঙ্খলা যেন না হয় তাই সতর্কতার জন্য এক সঙ্গে অনেক মানুষকে কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম থেকে আসা শফিক নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, রাতে চট্টগ্রাম থেকে বাসে উঠেছি। সকালে ঢাকায় নেমে আবার বাসে করে পিরোজপুর আসি আমরা ছয় জন। ‘দুপুরে আল্লামা সাঈদী হুজুরের কবর জিয়ারত করতে গেলে আমাদের কবরস্থানের পাশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি পুলিশ।’ নামাজ পরে কোন রকম মসজিদের ভিতর থেকেই হুজুরের জন্য দোয়া করে চলে আসি। আমাদের কাউকেই তার কবের আশেপাশে অবস্থান করতে দিচ্ছে না।
ঢাকা থাকে তিনটি মোটরসাইকেলে আসা কয়েকজন যুবক অভিযোগ করে বলেন, আমরা সকালে ঢাকা থেকে বের হয়ে এখানে এসে জোহরের নামাজ পরি। ছোট বেলা থেকে হুজুরের ওয়াজ শুনে আমরা বড় হয়েছি। আমরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে নেই। শুধু হুজুরকে ভালোবাসি বলেই তার কবর জিয়ারত করতে এসেছি। কিন্তু পুলিশ বাঁধা দেওয়ায় কবর জিয়ারত করতে পারিনি। আমাদের সাথে থাকা দুইজন অনেক কষ্টে মসজিদের ভিতর থেকে কবর জিয়ারত করে চলে এসেছে। মসজিদের ভিতরেও বেশিক্ষণ থাকতে দিচ্ছে না পুলিশ সদস্যরা।
তাদের মধ্যে থাকা আরেকজন যুবক বলেন, আমরা কবরের সামনে গেলে পুলিশ আমাদের বাঁধা দেয়। আমাদের দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে। ছবি তোলার কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা পুলিশ গালিগালাজ করে আমাদের সঈদী ফাউন্ডেশনের এলাকা থেকে বের করে দেয়।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বললে জানা যায়, দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই পুলিশ পাহারায় রয়েছে সাঈদীর কবর। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সাধারণ মানুষজন কবর জিয়ারতে আসছে। অনেকে মসজিদের ভিতর থেকে করতে পারলেও অনেকেই জিয়ারত না করে দূর থেকে কবর দেখেই চলে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
সাঈদী ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পিরোজপুর-১ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এর পর থেকে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল।
জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন (দলটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য) হন। ১৯৮৯ সালে তিনি জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাঈদী ২০০৯ সাল থেকে জামায়াতের নায়েবে আমিরের পদে ছিলেন।
What's Your Reaction?