মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমানের ৭ বছরের জেল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যাচেষ্টা: শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের ৭ বছরের জেল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমান ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নুর এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৬৫/১২০ বি ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড তদুপরি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া পেনাল কোডের ১২৪/১২০ ধারায় প্রত্যেককে দুই বছর করে সশ্রম কারাদন্ড তদুপরি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন বিচারক।
কারাদন্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করেন আদালত।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটে সাক্ষ্য দিতে হাজির হন জয়। ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ শুরু করেন। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি জবানবন্দি দেন। বেলা ৪টার দিকে তা শেষ হয়। এরপর জয় তার গাড়িবহর নিয়ে আদালত প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। অপরাধ ঘটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় রিজভী আহাম্মদকে।
এ অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান। এ মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টা ষড়যন্ত্রের নির্দেশদাতা হিসেবে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আর আসামি মোহাম্মদ উল্লাহর বিরুদ্ধে পরামর্শদাতার অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে রিজভী আহাম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে অন্য আসামিদের কাছে সেই তথ্য সরবরাহ করেন। অর্থায়ন ও পরামর্শদাতার অভিযোগ আনা হয়েছে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। মামলায় ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
শফিক রেহমান-মাহমুদুর রহমানের সাজায় ফখরুলের উদ্বেগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান ও আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রতিহিংসাপরায়ণ আওয়ামী সরকার কর্তৃক ভিন্ন মতের মানুষদের নামে দায়ের করা মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় কারাদণ্ড প্রদানের ধারাবাহিকতায় আজ সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানকে বানোয়াট মামলায় সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো। এ ধরনের মামলা একটি অলিক কাহিনী।’ ফখরুল বলেন, ‘যারা ১/১১ এর বিরুদ্ধে কথা বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেন, বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদেরকেই আওয়ামী সরকার টার্গেট করেছে। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সম্পাদকদের মধ্যে অন্যতম শফিক রেহমানের ‘যায়যায় দিন’ পত্রিকাটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও তরুণ সমাজে অত্যন্ত সমাদৃত।
মাহমুদুর রহমান গণতন্ত্রের জন্য একজন অকুতোভয় সৈনিক। এই দুই খ্যাতিমান সম্পাদককে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দেওয়া ফরমায়েশি রায়ে প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। জনগণ এই ফরমায়েশি রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সাজা দেওয়ার ঘটনা অবৈধ আওয়ামী সরকারের গভীর নীলনকশারই অংশ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দুর্বিনীত অনাচার ও রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার বিরুদ্ধে জনগণ যখন রাজপথ কাঁপিয়ে তুলছে তখন অবৈধ শাসকগোষ্ঠী জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। আর তাই শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের মতো দুইজন শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ আওয়ামী সরকার স্বীয় উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দিয়ে আওয়ামী সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণ এখন দৃঢ় সংকল্প নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। যত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, জনগণ আর ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচন করতে দেবে না। আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করবে জনগণ।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান ও আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিহিংসামূলক মামলায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি তাদের সাজা বাতিলের জোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
What's Your Reaction?