ডিভোর্সের পর সন্তানের জিম্মা ও অভিভাকত্ব নিয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন
বাংলাদেশে তালাক ও ডিভোর্স পরবর্ততে সন্তান কার কাছে থাকবে। তছাড়াও অভিভাবকত্ব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে জটিলতা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। এই সময় সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে রিরোধ এর কারনে সন্তানই একমাত্র ভূক্তভোগি হয়। এই সকল জটিলতা বা রিরোধ নিরসনে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে স্বামী বা স্ত্রীর অভিযোগের পেক্ষিতে নিরসন করে থাকে।
বাংলাদেশের আইনে ডিভোর্স বা তালাকের পর সন্তানের জিম্মা (Custody) ও অভিভাবকত্ব (Guardianship) নিয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে। এই বিধানগুলো মূলত পারিবারিক আইন এবং ধর্মীয় আইনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
মুসলিম পারিবারিক আইন।
মুসলিম পারিবারিক আইনের অধীনে সন্তানের জিম্মা এবং অভিভাবকত্ব নিয়ে নিম্নলিখিত নিয়মগুলি প্রচলিত:
1. প্রাথমিক হেফাজত (Hizanat):
- ছেলেসন্তান: সাধারণত ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মা সন্তানের প্রাথমিক হেফাজত পান।
- মেয়েসন্তান: মেয়ের বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মা সন্তানের প্রাথমিক হেফাজত পান।
2.জিম্মার পরিবর্তন:
সন্তানের পিতা বা অন্য কোন অভিভাবক সন্তানের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আদালতে মায়ের কাছ থেকে সন্তানের জিম্মা চেয়ে আবেদন করতে পারেন।
সন্তানের কল্যাণ যদি মায়ের জিম্মায় না থাকে তবে আদালত সন্তানের জিম্মা পিতার কাছে বা অন্য কোন উপযুক্ত অভিভাবকের কাছে স্থানান্তর করতে পারেন।
3.বিচারকের বিবেচনা:
-
- বিচারক সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করে জিম্মা নির্ধারণ করবেন।
- সন্তানকে মায়ের কাছে রাখলে তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক স্থিতি ও মানসিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
হিন্দু পারিবারিক আইন
বাংলাদেশে হিন্দু পারিবারিক আইন অনুযায়ী ডিভোর্সের পর সন্তানের জিম্মা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিধান রয়েছে:
- সন্তানের কল্যাণ:
- সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ ও কল্যাণ বিচারক সর্বদা বিবেচনা করবেন।
- পিতা সাধারণত সন্তানের প্রধান অভিভাবক হন, তবে সন্তানের মঙ্গল বিবেচনা করে মা জিম্মার আবেদন করতে পারেন।
খ্রিস্টান পারিবারিক আইন
খ্রিস্টান পারিবারিক আইনেও সন্তানের কল্যাণ ও স্বার্থ বিচারকের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। খ্রিস্টান আইন অনুযায়ী ডিভোর্সের পর সন্তানের জিম্মা ও অভিভাবকত্ব নিয়ে নিম্নলিখিত নিয়ম রয়েছে:
-
জিম্মার আবেদন:
- ডিভোর্সের পর মা বা পিতা উভয়েই সন্তানের জিম্মার আবেদন করতে পারেন।
- সন্তানের কল্যাণ ও স্বার্থ নিশ্চিত করতে বিচারক সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
আদালতের ভূমিকা
বাংলাদেশে ডিভোর্সের পর সন্তানের জিম্মা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদালত সন্তানের কল্যাণ ও স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়:
-
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
- সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করা।
- মা বা পিতা যেই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারবেন, তাকে জিম্মা প্রদান করা হয়।
-
আর্থিক স্থিতি:
- সন্তানের আর্থিক প্রয়োজন মেটানো।
- আর্থিক স্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মা বা পিতাকে জিম্মা দেওয়া হয়।
-
নিরাপত্তা ও মানসিক স্থিতিশীলতা:
- সন্তানের নিরাপত্তা ও মানসিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
- সন্তানের মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে জিম্মা নির্ধারণ করা হয়।
যে সব কারণে মা তার জিম্মাদারিত্বের অধিকার হারান
বাংলাদেশের পারিবারিক আইনে ডিভোর্সের পর মায়ের জিম্মাদারিত্ব (custody) নিয়ে কিছু বিশেষ শর্ত রয়েছে, যার অধীনে মা তার জিম্মাদারিত্ব হারাতে পারেন। এই শর্তগুলো সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রণীত। মা তার জিম্মাদারিত্ব হারানোর কিছু সাধারণ কারণ হলো:
-
নীতিহীন জীবনযাপন করলে:
- যদি মা নীতিহীন বা অসামাজিক জীবনযাপন করেন যা সন্তানের কল্যাণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে তিনি জিম্মাদারিত্ব হারাতে পারেন।
-
নিষিদ্ধ স্তরের কারো সঙ্গে বিয়ে করলে:
- যদি মা এমন কারো সঙ্গে বিয়ে করেন যিনি সন্তানের জন্য নিষিদ্ধ স্তরের মধ্যে পড়েন, তবে তার জিম্মাদারিত্ব বাতিল হতে পারে। তবে এই ধরনের বিয়ে যদি শেষ হয় বা বিচ্ছেদ হয়, তাহলে মায়ের জিম্মাদারিত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
-
সন্তানের প্রতি অবহেলা বা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে:
- যদি মা সন্তানের প্রতি অবহেলা করেন বা তার প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তবে তিনি জিম্মাদারিত্ব হারাতে পারেন।
-
বিয়ে থাকা অবস্থায় বাবার বসবাসস্থল থেকে দূরে বসবাস করলে:
- মায়ের যদি বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে এবং তিনি সন্তানের পিতার বাসস্থানের বাইরে বসবাস করেন, তবে তিনি জিম্মাদারিত্ব হারাতে পারেন।
-
ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করলে:
- মুসলিম আইন অনুযায়ী, যদি মা ইসলাম ছেড়ে অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করেন, তবে তিনি তার সন্তানের জিম্মাদারিত্ব হারাতে পারেন।
-
সন্তানের পিতাকে সন্তানের সাথে দেখা করতে না দিলে:
- যদি মা সন্তানের পিতাকে তার জিম্মায় থাকা সন্তানের সাথে দেখা করতে না দেন, তবে তিনি তার জিম্মাদারিত্ব হারাতে পারেন।
এছাড়া, বিচারক সন্তানের কল্যাণের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা করে। মা যদি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হন এবং সন্তানের কল্যাণ নিশ্চিত করতে না পারেন, তবে আদালত সন্তানের জিম্মাদারিত্ব পরিবর্তনের আদেশ দিতে পারে। বিবাহ ও তালাক সংক্রান্তে বিস্তারিত
What's Your Reaction?