কলাপড়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে মডেল মাদরাসা, শিক্ষার নামে বাণিজ্য
পটুয়াখালীর মহিপুরে ইক্বরা ইসলামিয়া মডেল মাদরাসা নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই। পাঠদানের অনুমতি না থাকলেও ক্লাস চলছে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা যায়, একটি আবাসিক ভবনের রুম ভাড়া নিয়ে খোলা হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নেই নিরাপদ খাবার পানি ও আলো বাতাসের ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা নেই শ্রেণিকক্ষে। শিশু থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি ক্লাসের বিপরীতে শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে মাত্র ৬ জন। ফলে একই সময়ে একজন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিতে হয় দুই থেকে তিনটি ক্লাস। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিংয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না পরিচালক, নিয়মিত চলছে কোচিং বাণিজ্য। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা থাকলেও নিয়মমাফিক উত্তোলন করা হয় না। মাঝেমধ্যে দায়সারাভাবে উত্তোলন করলেও তা প্রায়ই রাত ৮ টা পর্যন্ত থাকে, নেই কোনো দায়বদ্ধতা।
জানা গেছে, পরিচালক সাইফুল ইসলাম কামিল পাশ না করলেও নামের সাথে লেখেন মাওলানা। শিক্ষকদের সাথে করেন অসদাচরণ। প্রতিবাদ করলে দেন হুমকি-ধামকি, মিথ্যা অযুহাতে দেন অব্যাহতি। শিক্ষিকাদের দেন অনৈতিক প্রস্তাব। ফলে বেশিদিন স্থায়ীভাবে চাকরি করতে পারেন না শিক্ষিকারা, চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষিকা। এছাড়া সময়মতো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া হয় না। করেন কালক্ষেপণ, ঘুরান মাসের পর মাস। এছাড়া মেরেও দিয়েছেন অনেকের বেতন।
পরিচালক মোয়াজ্জেমপুর মাদরাসা থেকে সরকারি বই ক্রয় করে উচ্চ দামে বিক্রি করেন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে। শিক্ষার মান ভালো না হলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ফি’র নামে করেন বাণিজ্য। আওয়ামী লীগের আমলে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের গা ঘেঁষে চলেছেন, বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে রূপ পাল্টিয়ে ঘেঁষতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতাদের কাছে। নিজের অবৈধতাকে বৈধ করতে চালাচ্ছেন অপচেষ্টা। এতদিন কেউ তার এই গোমর ফাঁস না করলেও সাবেক-বর্তমান অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এত এত অনিয়মের পরেও এতদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে চালিয়ে আসছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এই মাদরাসায় কিছু অনিয়ম আছে। আমি সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে আসছি প্রায় ৮ মাস। আসার সময় আমার বেতন দেয়নি। পরে এই ৮ মাস ধরে কিস্তিতে কিস্তিতে দিয়েছে।। সাবেক সহকারী শিক্ষক ফয়সাল মুন্সী বলেন, ‘আমরা ১-২ দিন ক্লাসে না গেলেই পরিচালক বেতন কেটে রাখতো, একটু লেট হলেই খারাপ ব্যবহার করতো। কেউ চাকরি ছেড়ে চলে গেলে তার নামে আজেবাজে মন্তব্য করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘পরিচালক আমাদের সাথে খুব বাজে ব্যবহার করে। ঠিকমত বেতনাদি দেয় না, এক মাসেরটা আরেক মাসে দেয়। বেতন উঠলেই তিনি নিয়ে খরচ করেন। আমাদেরও সংসার আছে, আমাদেরও চলতে হয়। কিন্তু সেটা তিনি বুঝতেই চান না। এখন আমাদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাবেক শিক্ষিকা জানান, অনৈতিক প্রস্তাবের কারণে তারা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠান পরিচালক সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, আমি এক জায়গায় আসছি, আপনাকে পরে ফোন দিচ্ছি, বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কলাপাড়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই মাদরাসার নাম আপনাদের মাধ্যমেই জানলাম। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুমোদন ছাড়া শ্রেণিভিত্তিক পাঠদান করা সম্পূর্ণ বেআইনি।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শীঘ্রই ইক্বরা ইসলামিয়া মডেল মাদরাসার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
What's Your Reaction?