সরকারে থাকার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করে নির্বাচনে আসুন

সরকারে থাকার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করে নির্বাচনে আসুন ক্ষমতায় বসে সরকার গঠনের কথা চিন্তা করবেন না যশোরের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যাদের রাজর্নীতি করার ইচ্ছে আছে; তারা পদত্যাগ করে নির্বাচনে আসুন। ক্ষমতায় বসে সরকার গঠনের কথা চিন্তা করবেন না। নির্বাচন করে সরকার গঠন করুন, না হলে জনগন মেনে নেবে না।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক দলীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করলে এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। অন্তর্তীকলীন সরকারের উদ্দেশ্য বলতে চাই আপনাদের যদি কোন খায়েশ থাকে দয়া করে পদত্যাগ করেন যে দল করছেন নির্বাচনে আসুন জনগণের সামনে আসুন। ইউনুস সাহেব সেদিন বললেন এখানে যা যা আলাপ হবে আমি সবকিছু জনগণকে জানিয়ে দেব ।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, বিএনপি গত ১৬ বছর সকল প্রকার হত্যা,খুন,গুম ও হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলো এখনো তেমনিই আছে। যতদিন দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত না হচ্ছে, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে ততোদিন বিএনপি রাজপথেই থাকবে।
বর্তমান সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আপনাকে বিএনপি শ্রদ্ধা করে। দেশবাসী আপনাকে ভালোবাসে। আপনি আমাদের গর্ব। কিন্তু সেই সম্মানটুকু রক্ষার দায়িত্ব আপনারই। আপনি যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিয়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে দেশবাসী তা কোন ভাবেই মেনে নেবে না। আপনাদের যদি ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসে তাহলে রাজনৈতিক দল গঠন করে জনতার কাতারে নেমে এসে নির্বাচনে অংশ নিন। বিএনপি আপনাদেরকে স্বাগত জানাবে। কারন বিএনপি বহু দলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব নিজের দল আওয়ামীলীগসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাষন বাকশাল কায়েম করেছিলো। ৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটলে সিপাহী জনতার আন্দোলনে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় অদিষ্ঠিত হয়ে দেশে একদলীয় শাষনের অবসান করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনারাও ক্ষমতার চেয়ার ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুন। জনগণের রায় যদি আপনাদের পক্ষে যায় তাহলে আপনারাই দেশ পরিচালনা করবেন। তবুও আমরা বলবো জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করুন। কারন এই অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্যামে গত ১৬ বছরে বিএনপির ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। ৩৬ জুলাই বিপ্লবে শত শত ছাত্র জনতার প্রাণের বিনিময়ে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এই সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা অনেক বেশী।আপনাদের ব্যর্থ হলে চলবে না। জনগণের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা আপনাদেরই করতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্র সংস্কারে ভিশন ’৩২ ঘোষনা করেছিলেন। আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার রূপরেখা ঘোষনা করেছেন। এসবই চলমান বিষয়। আর এসব সংস্কার তখনই কার্যকর হবে যখন দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ ভালো নেই। পতিত স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তরে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসরা জেঁকে বসে আছে। দেশকে দ্রুত ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে হলে গণতাইন্ত্রক সরকারের কোন বিকল্প নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে। মানুষের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। প্রশাসন যন্ত্র ঠিকমতো কাজ করছে না। এই অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। এই জন্যই বিএনপি দেশের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও নির্ভরতা রক্ষা করতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দাবি করছে। কোন কোন দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করে জনআকাংখাকে ভূলুন্ডিত করার চক্রান্ত করছে। কিন্তু দেশবাসী তাদের সেই ষড়যন্ত্র চক্রান্ত মেনে নিবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, গত ১৬ বছরে সকল রক্ষচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশের মানুষ বিএনপির পতাকাতলে যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিলো , আজো তেমনি আছে। হত্যা, খুন, গুমের রাজনীতি করে পতিত স্বৈরাচার হাসিনা বিএনপির নেতাকর্মীদের যেমন বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। তেমনি এই সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করার মাধ্যমে যদি ভিন্ন কোন চিন্তাভাবনা করে থাকে তা বিএনপির নেতাকর্মীরা কখনো বাস্তবায়িত করতে দিবে না। বিএনপি চাই এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে। তার জন্য যতদিন প্রয়োজন বিএনপির নেতাকর্মীরা ততোদিন রাজপথেই থাকবে।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, টিএস আইয়ুব, এ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর পৌর সভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, কেশবপুরের আবুল হোসেন আজাদ, কেন্ত্রীয় নেতা ফিরোজা বুলবুল কলি, সাবিরা নাজমুল মুন্নি, মণিরানপুরের এ্যাড. শহীদ ইকবাল, অভয়নগরের ফারাজী মতিয়ার রহমান, চৌগাছার এম এ সালাম, কেশবপুরের আব্দুস সালাম, বাঘারপাড়া বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান, চৌগাছার সেলিম রেজা আওলিয়ার, নগর বিএনপির সভাপতি চৌধুরী রফিকুল ইসলাম মুল্লুক, সদর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জারুল হক খোকন, যুবদলের এম তমাল আহমেদ,আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
What's Your Reaction?






