ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালগুলো

Aug 11, 2023 - 06:14
 0  56
ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালগুলো
দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার স্থিতিশীল হওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র এখনও উদ্বেগজনক। শয্যা ফাঁকা না থাকায় প্রথম সারির অনেক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের।

দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার স্থিতিশীল হওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র এখনও উদ্বেগজনক। শয্যা ফাঁকা না থাকায় প্রথম সারির অনেক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ৫৬টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এসব হাসপাতালে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৫ হাজার ৫৫৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ৯ আগস্ট পর্যন্ত এসব হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ২ হাজার ৮৭ জন।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) কর্মরত তাওহীদা খুশবো গত সোমবার এভারকেয়ার হাসপাতালে এসেছিলেন তার ৬ বছর ৭ মাস বয়সী মেয়ে তাহিয়াত জান্নাতকে ভর্তি করাতে। জান্নাতের জ্বর সেদিন ১০৪ ডিগ্রির নিচে নামছিল না। কিন্তু তবু ভর্তি নেয়নি এভারকেয়ার, কারণ তাদের শয্যা খালি ছিল না।

তাওহীদা খুশবো ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়েকে ভর্তির জন্য আমরা এভারকেয়ার হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে যোগাযোগ করলে তারা জানায় ভর্তি নিতে পারবে না, কারণ সিট ফাঁকা নেই।

প্রথম সারির আরেক বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ার হাসপাতালে একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামকে। ডেঙ্গু আক্রান্ত সন্তানকে তিনিও ভর্তি করাতে পারেননি স্কয়ার হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তানকে ভর্তি করান তিনি।

কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার ডেঙ্গু আক্রান্তের হার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে, তবে এখন ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার বাড়ছে। ঢাকায় স্থিতিশীল থাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কমে এসেছে। তবে প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ আছে।

সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে এ বছর সবাই আতঙ্কে আছে। এ কারণে প্রিয়জনদের কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ভালো সেবার জন্য বেশি খরচ করে হলেও প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চায়। কিন্তু এখন দেখছি সরকারি হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা থাকলেও বেসরকারি  হাসপাতাল রোগী নিতে পারছে না।

সাধারণ ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি নিচ্ছে না এভারকেয়ার

রোগী ভর্তি না করা প্রসঙ্গে এভারকেয়ার হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিট ফাঁকা না থাকলে আমরা কীভাবে ভর্তি নেব বলেন? আমাদের তো নির্দিষ্ট পরিমাণ শয্যাভিত্তিক রোগী ভর্তি করা হয়। শয্যা ছাড়া তো আমরা কোনো রোগী ভর্তি নিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু যদি কারও ক্রিটিক্যাল হয়ে যায়, কারও যদি আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা তাদের ভর্তি নিচ্ছি। যারা সাধারণ ডেঙ্গু নিয়ে আসছে, তাদের আমরা ভর্তি নিচ্ছি না। বলছি আমাদের সাধারণ বেড ফাঁকা নেই।

তিনি বলেন, সত্যি বলতে বেডের বিষয়টা এখন জোর দিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। এখন বলছি আইসিইউ প্রয়োজন এমন রোগীদের আমরা ভর্তি নিচ্ছি, কিন্তু এক ঘণ্টা পরে এ সিদ্ধান্ত নাও থাকতে পারে। কারণ- আমাদের ইমারজেন্সিতে সবসময় ৮ থেকে ১০ জন রোগী সিরিয়ালে থাকেই। অর্থাৎ এখন ফাঁকা আছে, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেগুলো পূর্ণ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং ফাঁকা আছে এই বিষয়টি আমরা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারছি না।

‘এই ফাঁকা, এই পূর্ণ’ পপুলার হাসপাতাল

পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. ইশতিয়াক রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত কোনো শয্যা বরাদ্দ না থাকলেও নিয়মিত ৪০ থেকে ৬০ জনের মতো ডেঙ্গু রোগী এখানে ভর্তি থাকেন।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে মিনিমাম তিন-চার দিন থাকে। আর অন্যান্য কিছু রোগী আছে একদিন থেকেও বাসায় চলে যায়। এ কারণে সিটের বিষয়টি কনফার্ম করে আমরা কখনো বলতে পারি না। হঠাৎ খালি হয়, আবার হঠাৎ সেগুলো ভর্তিও হয়ে যায়।

ডা. ইশতিয়াক রহমান আরও বলেন, সকালের দিকে কিছু সিট ফাঁকা থাকলেও সন্ধ্যার দিকে সবগুলো পূর্ণ হয়ে যায়। যে কারণে সন্ধ্যার পর কোনো ডেঙ্গু রোগী এলেও অনেক সময় আমরা তাদের ভর্তি নিতে পারি না। তবে ইমারজেন্সি কোনো রোগী এলে তাদের আমরা ইমারজেন্সিতে ফ্লুইড স্যালাইন দিয়ে রেখে দিই।

এক কেবিনে দুই ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেয় ল্যাবএইড

ল্যাবএইড হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ল্যাবএইড হাসপাতালে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী থাকে ৩০ থেকে ৪০ জন, যদিও ডেঙ্গুর জন্য ২৩টি সিট বরাদ্দ আছে। এখন আর ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষায়িত কোনো বেড রাখা হচ্ছে না। যারাই আসছে আমরা ভর্তি নিয়ে নিচ্ছি। যদিও ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আমরা আলাদা একটি ওয়ার্ডের মতো করেছি, কিন্তু সেই বেডগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ কম।

তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েই বেশিরভাগ মানুষ কেবিন চায়, যে কারণে সাধারণ বেডের তুলনায় আমাদের হাসপাতালে কেবিনের চাপটা একটু বেশি। এর বাইরে ৮০টি সিটের মতো আছে, যেগুলোতে আমরা রোগীদের ভর্তি দিতে পারি।

ডেঙ্গু রোগী আসছে, কিন্তু ভর্তি নিতে পারছেন না- এমনটা কখনও হয় কি না জানতে চাইলে আরিফুর রহমান বলেন, এ রকম যে হয় না, তা না। তবে আমরা চেষ্টা করি কোনো না কোনোভাবে রোগীটিকে সেবা দেওয়ার। অনেক সময় এক কেবিনেই রোগীদের সাথে কথা বলে আরেকজন রোগীকে ‘আউট পেশেন্ট’ হিসেবে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। আমরা চেষ্টা করি রোগীর প্রায়োরিটি অনুযায়ী ট্রিটমেন্টটা নিশ্চিত করার।

ঢাকা স্থিতিশীল হলেও ঢাকার বাইরে বাড়ছে  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার ডেঙ্গু আক্রান্তের হার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে, তবে এখন ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার বাড়ছে। ঢাকায় স্থিতিশীল থাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কমে এসেছে। তবে প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ আছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় নির্দিষ্ট গাইডলাইন করে দেওয়া আছে, তাদের বলা হয়েছে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে। তাদের (বেসরকারি) ডেঙ্গু পরীক্ষায় (এনএস-১) সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কারও নেওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে রোগীদের জন্য মোট শয্যা রয়েছে ৬০০টি। রাজধানীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া অন্যান্য প্রায় সবগুলো হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সর্বমোট ৫৬টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দিচ্ছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কাকরাইল ইসলামি ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল।



What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow