২৮৬ দিন বিলম্ব মার্জনা, আপিল পুনরুজ্জীবিত জামায়াতের নিবন্ধন
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
২৮৬ দিন দেরি মার্জনা করে আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলের করা আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) গত বছরের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন আপিলকারীর পক্ষ থেকে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকার কারণে আপিল বিভাগ ওই আবেদন ডিসমিসড ফর ডিফল্ট হিসেবে খারিজ করে।
এরপর ২৮৬ দিন দেরি মার্জনা করে আপিল এবং ২৯৪ দিন দেরি মার্জনা করে লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে আলাদা আবেদন করা হয়। আবেদন দুটি গত ১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ অক্টোবর দিন ধার্য করে। আজ আবেদন দুটি শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মোহাম্মদ আলী আজম।
আদেশের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘জামায়াতের আপিল শুনানির জন্য যে দিন ধার্য ছিল, সেদিন (গত বছরের ১৯ নভেম্বর) দেশব্যাপী হরতাল ছিল, যার কারণে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হাজির হতে পারেননি। এ জন্য শুনানি মুলতবির দরখাস্তও দেওয়া হয়েছিল। তবুও আপিল বিভাগ ডিসমিসড ফর ডিফল্ট হিসেবে আপিল খারিজ করে।’
আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুরের বিষয়টি জানিয়ে শিশির মনির বলেন, ‘এটি একটি সার্টিফিকেট আপিল। এখানে সাংবিধানিক ইস্যু জড়িত থাকায় সরাসরি আপিল করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগই সার্টিফিকেট দিয়েছিল। হাইকোর্ট বিভাগ যেখানে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, সেখান থেকে শুনানি ছাড়া খারিজ করা যায় না। পরবর্তীতে নিয়মিত লিভ টু আপিলও করা হয়। আপিল বিভাগ বিলম্ব মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যিনি আপিলকারী ছিলেন, তিনি মারা গেছেন। বর্তমানে যিনি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আছেন, তিনি এই মামলায় আপিলকারী হিসেবে যুক্ত হবেন। এরপর আপিলের শুনানি হবে।’
জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রিট, রায় ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, ২০০৯ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি রিট করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। এরপর জামায়াত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য আবেদন করে, যা পরবর্তী সময়ে আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
এছাড়া, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
What's Your Reaction?